প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমরা এ বছর অর্থাৎ ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে আরও চারটি মেরিন অ্যাকাডেমির কার্যক্রম চালু করেছি। ইচ্ছা আছে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেরিন অ্যাকাডেমি চালু হবে, যেখানে ছেলে-মেয়েরা শুধু প্রশিক্ষিত হবে না, দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে; বেকার সমস্যা দূর হবে।’

চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিভাগের পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটের পর দেশের বাকি বিভাগগুলোতেও মেরিন অ্যাকাডেমি চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসব একাডেমির মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামে রোববার সকালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৬তম ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

ওই সময় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমরা এ বছর অর্থাৎ ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে আরও চারটি মেরিন অ্যাকাডেমির কার্যক্রম চালু করেছি। ইচ্ছা আছে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেরিন অ্যাকাডেমি চালু হবে, যেখানে ছেলে-মেয়েরা শুধু প্রশিক্ষিত হবে না, দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে; বেকার সমস্যা দূর হবে।’

বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অ্যাকাডেমির গ্রহণযোগ্যতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

চলমান করোনাভাইরাস মহামারির বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে ৩৫৯ প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট দুই বছর মেয়াদি প্রাক-সমুদ্র প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছে। তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানান সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ধরনের প্রতিকূলতা আসবে, সেগুলো চ্যালেঞ্জ করার মতো সক্ষমতা তোমরা অর্জন করেছো। সমুদ্রচারণ কোনো সাধারণ পেশা নয়। এ পেশায় আত্মনিয়োগ করলে সমুদ্রের প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।

‘বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য পরিবহণ সমুদ্র পথেই হয়ে থাকে। তাই বিশ্ব অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে মেরিন ক্যাডেটদের ভূমিকা অপরিসীম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবে, তোমরা শুধু নির্ভীক সমুদ্রচারী নও, তোমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করো, আসলে বাংলাদেশের দূত হিসেবে কাজ করো। তোমাদের দেশপ্রেম, সততা, আত্মবিশ্বাস ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করবে।

‘যখন এক দেশের পণ্য আরেক দেশে জাহাজে বয়ে নিয়ে যাবে, তোমরা বাংলাদেশের হাজার বছরের সভ্যতা ও সংস্কৃতি তুলে ধরবে। তোমাদের সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ভবিষ্যত ক্যাডেটদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।’

দেশ-বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে মেরিন ক্যাডেট নিয়োগে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনসহ দেশি-বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমাদের মেরিন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণে উৎকর্ষ অর্জন, কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং সাইন অন ও সাইন অফ সুবিধা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা আমাদের পাশে থাকবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

এ খাতের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি; পূর্বের তিন বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অফ মেরিটাইম সায়েন্স পাস কোর্সকে ২০১৫ সালে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সে উন্নীত করেছি। ২০১৮ সালে মাস্টার অফ মেরিটাইম সায়েন্স চালু করেছি।’

প্রশিক্ষণকে যুগোপযোগী করতে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া মেরিন সিমুলেশন সেন্টারে ২০১৯ সালে নেভিগেশন সিমুলেটর স্থাপনের পর এ বছর ‘ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর’ স্থাপন করা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক মহামারির কারণে সমুদ্রে আটকে পড়া মেরিন কর্মকর্তা ও মেরিন প্রকৌশলীদের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েনি। দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেনি। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরাও করোনাকালে অবিরাম দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে, মেরিন অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ারদের কী-ওয়ার্কার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি।’

বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির প্রায় পাঁচ হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেটরা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সেবার মাধ্যমে প্রতি বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করেন বলেও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক পরিসরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে থাকেন। আমি এটাই বলব, কর্মক্ষেত্রে সততা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে, তার ফলে নিজেরা যেমন ভালো থাকবে, দেশের মান বজায় থাকবে। দেশ এগিয়ে যাবে।’

আগামী দিনের হাইটেক সমুদ্র জাহাজ পরিচালনার উপযোগী পেশাদার ক্যাডেট তৈরিতে বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।